গত কয়েক মাস ডাক্তারের কাছে দৌড়ে একটা অভিজ্ঞতা ও একটা উপলব্ধি হয়েছে। উপলব্ধি হল স্বয়ং ডাক্তারদের অসুস্থতা আর অভিজ্ঞতার নাম ভুগান্তি। এই অভিব্যক্তি সরকারি বেসরকারি স্বনামধন্য হাসপাতাল মিলিয়ে।
এই মহান পেশার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেই বলছি—আমাদের দেশের ডাক্তারদের জন্য একটা চিকিৎসালয় জরুরি হয়ে পড়েছে। ডাক্তারদের এই অসুস্থতা একজন রোগির মতই তাদের নিজেদের ও পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। মহামারি আকার ধারণ করার আগে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। কারণ, সাপের চেয়ে গিরগিটির জিহ্বা লম্বা হলেও সাপই বেশি ভয়ংকার। বিগত কয়েকমাসে মনে হল, সবাই কোন না কোন ভাবে মানুসিকভাবে অসুস্থ। এই মানুসিক অসুস্থতা তাদের আধ্যাতিক চিকিৎসক বানিয়ে দিয়েছে। রোগীর নাম শুনেই তিনারা প্রেসক্রিপশন লেখেন। আমাদের দেশে আবার যেহেতু কেউ যতক্ষণ না কারো মাথায় লাঠি ভাঙ্গতে উদ্যত হচ্ছে। তাকে মানুসিক রোগী বলা বড় অন্যায়। তাই সেটা হয়তোবা ধোপে টিকবেনা। তবে ঘটনা সত্য। তাদের সঠিক চিকিৎসা হলে, প্রকৃত রোগীদের সঠিক চিকিৎসা হবে।
রোগী দেখার সময় এমন ভাবে কথা বলবে যে তাদের কথা বুঝতে রোগীরও ডাক্তারি পড়লে ভালো হত। তবে, সবাই এমন তা বলছিনে। কেউ কেউ এমন আচারণ করে যেন রোগী তার যন্ত্রণার কারণ। প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী ভারতে চলে যাচ্ছে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে—সেবিকা ও ডাক্তারদের সুন্দর ব্যবহার। এটা শিখতে হবে।
এসব ছেড়ে, ডাক্তারদের কেউ অর্থের আবার কেউ মর্যাদার পেছনে ছুটছে। এদের কেউ কেউ ধান্দার পাগল। চাকুরির অবস্থান ও পদ বলে এই অসুস্থতা ভিন্ন ভিন্ন হয়। স্বনামধন্য যেসব বেসরকারি হাসপাতাল তাদের চিকিৎসকরা ঘন্টায় কত রোগী দেখা যায় সেটার জন্য উদগ্রীব। কত তাড়াতাড়ি কতজনকে বিদায় করা যায় সেটাই তাদের মুখ্য বিষয়। কারণ, একজনকে বিদায় করলেই, কমপক্ষে শ’পাচেক টাকা পকেটে তোলা যায়। আর সরকারি হাসপাতালে যারা আছেন, তাদের লক্ষ্য কত তাড়াতাড়ি রোগীদের বিদায় করা যায়। কারণ? শেষ হলেই তো ভাড়া খাটার সুযোগ তৈরি হবে। এক দৌড়ে অন্যকোন বেসরকারি হাসপাতালে যেয়ে উঠা যাবে। ত্রিশ টাকার রোগীর চেয়ে পাঁচশ টাকার রোগীর মুখ দর্শন কম সৌভাগ্যের নয়!
আর যিনি পদমর্যাদায় উচ্চ আসনে। তার তো কথায় নেই। ন্যানো সেকেন্ডেই রোগী দেখা শেষ করেন। কয়েক সেকেন্ডে রোগী দেখেন এমন একজন ডাক্তারের কথা বলছি। যিনি এখন ঢাকার এক সরকারি পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েট চিকিতসালয়ের কর্ণধর। যিনি পেশার খাতিরে কর্ণ ধরেনও বটে। আমার এক বন্ধুকে তার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। এই মহান আধ্যাতিক চিকিৎসক নেতা রোগীর নাম শুনেই ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন। টিনের চালে কাক, আমি তো অবাক! এমন অনেক অবাক করা ঘটনা ঘটন পটীয়সী আমদের এখনকার মহান চিকিৎসকরা।
আরে তোদের টাকার প্রয়োজন এতো। যে টাকা দিয়ে পড়েছিস ওটা দিয়ে ব্যবসা করলিনা কেন? ধান্দা ভালো লাগে আমলা হলি না কেন? দেশের সম্পদ নষ্ট করে সেবক হতে গেলি কেন? এই পেশায় সেবা নামক যে ট্যাগ লাগানো হত, বোধ করি, সেটা না থাকলেই মানুষের উপকার হয়। মানুষ তাদের ঠাঙ্গানোর সুযোগ পেতো।
আমার বাবার চিকিৎসা করাচ্ছি একজনের কাছে। শুনেছি তিনি নাকি এই রোগীদের শেষ ভরসা। তিনিও সেমি-আধ্যাতিক ডাক্তার। যে ক্ষেত্রে স্বয়ং ইন্সপেকশনের প্রয়োজন। তিনি রোগীর মুখের কথা শুনে ভেতরের খবর জেনে যান। কারণ, তার তো লাভ পেছনে। সামান্য সন্দেহ হলেই, যাও টেস্ট করো। টাকা ঢালো। কারণ, তুমি যেখানেই টাকা ঢালবে, কমিশনের টুপাইস তার পকেটেই পড়বে।
তাই, বলি ভন্ডামি ছাড়ুন। দেশের মানুষের টাকায় পড়েছেন, তাদের মন দিয়ে সেবা করুন। সেটা না পারলে, পুঁজি জমিয়ে মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের ব্যবসায় নেমে পড়ুন। টাকা বা ধান্দা কোনটারই অভাব হবে না।
এখন প্রশ্ন এসেই যায়। তবে, এমন কেন হল? একজন সেবক কেন ‘টাকা লোভী’ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো। একজন ডাক্তারকে ডাক্তার হতে হলে অনেক চরাই উতরাই পার হতে হয়। সেবার মানসেই তো সে পড়তে আগ্রহী হয়। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা এই সমাজ নিজেই, নাকি শিক্ষা ব্যবস্থা কোন গলদ? একজন চিকিৎসক তো শপথ নিয়ে এ পেশায় আসে। কিসে তাকে এমন ভয়ঙ্কর বানিয়ে তোলে? সেটা বের করাও জরুরি। না করতে পারলে এই ব্যবস্থা টিকবে না। মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।