নারী সহিংসতামুক্ত একটি দিন চাই!

নারী সহিংসতামুক্ত একটি দিন চাই!

 

নারী কে?

এ প্রশ্নের উত্তর অনেক রকম হতে পারে। কারণ, একজন নারী তাঁর জীবদ্দশায় অনেক নামেই পরিচিত হন। কখনো মা, কখনো বোন, কখনো স্ত্রী, আবার কখনো বা বন্ধু। সমাজ বা পরিবারে নানা সম্পর্কের জালে আবদ্ধ একজন নারী।

এই প্রতিটি সম্পর্ক একেকজন নারীকে নানান দায়িত্বের চাপে আবদ্ধ করে ফেলে। আর এই প্রতিটি সম্পর্কের খাতিরে নারীকে স্বীকার করতে হয় অনেক ত্যাগ। সন্তান জন্মদান, তাদের লালন-পালন, পরিবারের দেখাশোনা—সব এক হাতেই সামলান এই নারীই। আর কর্মজীবী হলে তো কথাই নেই। জীবনবাস্তবতা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

কিন্তু এই মায়া বা সম্পর্কের বাঁধনও তাঁকে ধর্ষকের পাশবিক নির্যাতন থেকে বাঁচাতে পারেনি। পারছেও না।এমনকি এই ধর্ষকেরা কোনো না কোনো পরিবারের সদস্য; যারা আমাদের এ সমাজেরই অংশ। সে মায়াময় বাঁধনও তাদেরকেও এই জঘন্ন কাজ থেকে বিরত রাখতে পারছে না।

প্রতিদিন সংবাদপত্র খুললেই পাওয়া যায় এক বা একাধিক ধর্ষণ বা নারী প্রতি সহিংসতার খবর। ধর্ষণের পর হত্যার খবর। ধর্ষণের পর আত্মহত্যার খবর। শিশু থেকে বৃদ্ধ—কেউ এই ভয়াল থাবার বাইরে নয়। কখনো নিকটাত্মীয়, আবার কখনো বন্ধু, আবার কখনো বা অন্য কেউ এ অপরাধে করছে। নারী যেন আজ কারও কাছেই নিরাপদ নয়।

১৪টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে ৬৬৬ নারী ধর্ষণের শিকার হন।পরবর্তী দুই বছরে বেড়ে ২০১৬ সালে সে সংখ্যা ৮৪০ হয়। ওই তিন বছরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন ৪৩৯ জন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার কয়েক হাজার নারী।

এ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে গড়ে দুই জনের ও বেশি নারী ধর্ষিত হয়। ২০১৬ সালে গড়ও একি রকম। ২০১৬ বছরে গণধর্ষণের শিকার হন ১৬৬ জন নারী।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক মাসে প্রায় প্রতিদিন নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের কোনো না কোনো সংবাদ আছেই। বাংলাদেশ জাতীর মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্যানুযায়ী, এ বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ দিনে ধর্ষণের শিকার হয় হন ৩৮ নারী। জানুয়ারীর ৩০ দিনে যে সংখ্যা ছিল ৫২ জন।

শুধু তাই নয়। গত ৬ মার্চ প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, রাজধানীতে চার বছরের কম বয়সী তিন বোন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

এটি শুধু সংখ্যাই নয়, যা আমাদের সহিংসতার মাত্রাও প্রকাশ করে। আমরা সবাই এর সঙ্গে জড়িত নই। তবে, এ ব্যর্থতার দায় আমাদের সবার।

সমাজে নারী-পুরুষ মিলে যে সম্পর্কের বাঁধন, সে সম্পর্কের বাঁধন যেমনি তাদের রক্ষা করতে পারেনি এই নির্মম সহিংসতা থেকে; তেমনি পারেনি আমাদের কেউ সে অপরাধ করা থেকে বিরত রাখতে। বরং ধীরে ধীরে বীভৎসতার মাত্রাও বেড়েছে। বেড়েছে গণধর্ষণ।

২০০৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত আট বছরে ধর্ষণের শিকার ৪ হাজার ৩০৪ জনের মধ্যে ৭৪০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।

শিশুরাও এই পাশবিকতার বাইরে নয়। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে ১৬১ দশমিক ৮১ শতাংশ। গণধর্ষণ বেড়েছে ৩৫০ শতাংশ। ধর্ষণের পর হত্যার সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। ধর্ষণের চেষ্টা বেড়েছে ৩৮০ শতাংশ। উত্ত্যক্তকরণ বেড়েছে ৭৭১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। যৌন নিপীড়ন বা শ্লীলতাহানির ঘটনা বেড়েছে ২৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। (প্রথম আলোয় গত ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ সালে প্রকাশিত)

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশুদের ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফি, বলাৎকার, উত্ত্যক্তকরণ, শিক্ষকের মাধ্যমে যৌন নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৭৫৪টি। (প্রথম আলোয় গত ২৮ অক্টোবর, ২০১৬ সালে প্রকাশিত)

তাহলে সমস্যা কোথায়? অনেকে অনেক মত দিতে পারেন, কিন্তু প্রকৃত সমস্যা হলো আমাদের চিন্তায়। আমরা কি পেরেছি নারীকে সেই স্বস্তি দিতে? প্রাকৃত অর্থে আমরাই ব্যর্থ হয়েছি নারীবান্ধব সমাজ গড়তে।

১৬ কোটি মানুষের দেশ। যে দেশে নারী-পুরুষের অনুপাত প্রায় ১০০:১০০; সেখানে নারীর প্রতি পুরুষের এই সহিংস আচরণ মোটেও কাম্য নয়। বরং এখানে সবার অবদান সমান হবে সেটাই কাম্য।

সেজন্য ধর্ষণমুক্ত একটি দিন চাই। একটি দিন, যেদিন নারীর প্রতি কোনো ধরনের নির্যাতন হবে না।

আমাদের উদারতা, সচেতনাতা ও সহিষ্ণুতাই হতে পারে এর উপযুক্ত হাতিয়ার।

 

 

 

 

আজ থেকে তোমায় ‘নদী’ বলে ডাকবো

কেউ বলে নারী, কেউ অর্ধাংঙ্গী
কেউ রমণী, কেউ বা সীমন্তনী তোমায়
কারো শিরোধার্য, কেউ করে হীন কদর্য
আরও কত কী!
কারো মা তুমি,  কারো ভগিনী, কারো জায়া,
কারো রোষানলে হও অপয়া
অথচ তুমি শুধুই মানুষ
এক জীবন্তিকা সম
যে তুমি দানো প্রেম কঠিনেরে
করো মহোত্তম নিচ অধমেরে
গরদ-ভরা হৃদয়ে সিঞ্চ অমৃত
দানো সজীবতা অকৃত্তিম ত্রাণে
দানো প্রাণ মৃত প্রাণে
নদীর মত তুমি বহ কালান্তরে
বৈশাখ কিবা অঘ্রাণে
তাই তোমায় এ নামেই ডেকেই তৃপ্ত এ হিয়া
 নিমন্তন্ন তোমার এ আখিঁভারা ফুললঘ্রাণে।