পল্লীবধূর যে অনুশীলন মুগ্ধকরে

Village

বহুদূরে। আধুনিকতার পঙ্কিলতা ছাড়িয়ে অনেক দূরে। যান্ত্রিক সভ্যতা যেখানে প্রাগঐতিহাসিক। সবুজ শ্যামলিমা যেখানে মূল সত্য। সেই অনুক্ত সত্যের মাঝে। সেই অপার প্রাকৃতিক মহিমার মাঝে। মাটির দেয়াল অথবা খড়ের ছাউনিতে মৃন্ময়ী যে বঙ্গাল জীবন। সেই জীবনের অর্ধাঙ্গ আর অর্ধাঙ্গী সে স্বপ্ন বোনে। সে স্বপ্ন আজো বাংলাকেই প্রতিনিধিত্ব করে। মাস, তারিখ, ও দিন গণনায়ও যে সমাজে এখনো ইংরেজ প্রভুত্বের আধিপত্য স্বহাস্যে ভেঙচি দেয়। তাঁরা সে সমাজ থেকে অনেক অনেক দূরে। এক বাঙ্গালী বধু টাকার হিসেব কষেন বাংলায়। মাসের হিসেব হয় বাংলায়। আজ সকালে সদ্য মা হওয়া মুরগী ক’টা বাচ্চা ফুটিয়েছে। সেগুলোর হিসেব হয় বাংলায়। ভোরের আলোয় ঝরে পড়া লাউয়ের ফুল থেকে কয়টা কচি জন্মালো। আজ হাঁসগুলো কয়টা ডিম দিলো। সব হিসেব হয় শুধুই বাংলায়। হাসি-কান্না, আবেগ-অনুভূতি, ও চিন্তা-চেতনা সবই বাংলায়।

বাংলার রঙ, গন্ধ, ভাব খুঁজতে যে সমাজে রীতিমত গবেষণার প্রয়োজন হয়। সেখানে অবাদ বংলা চর্চার বিচারণভূমি পল্লী বাংলার কোল।

শিক্ষার কূলটা ধন আমাদের মুখ হতে বাংলা মাসের নাম উচ্চারণ অনেকটা অনভিপ্রেত। আধুনিক হওয়ার নামে বাঙ্গালী তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সেখানে ইংরেজি চর্চায় মরণ পণ। ইংরেজি জানা যে সমাজে সামাজিক মর্যাদার কারণ হয়। সে সমাজে বাঙ্গালী বঁধুর এই বাংলা চর্চা শুধু মুগ্ধই করে না, প্রাণও ভরিয়ে দেয়।

আর আথিতীয়তা? বাঙ্গালীর ঐতিয্যে মিশে আছে যে সত্য। তার কোন কমতি নেই সেখানে। সে আথিতীয়তার জুড়ি মেলা ভার। হোকনা কাঠের চৌচাল আর খড়ের ছাউনী। তবুও এক গাল নিষ্পাপ হাসি নিয়ে কোন আশীতিপর বৃদ্ধ স্বাগত জানাবে। অন্তত কিছু একটা মুখে না দিয়ে চৌহদ্দি পার হওয়া বড়ই কঠিন।

সৌভাগ্য হলে। চৌকাঠ পেরোলেই দেখতে পাবে দাম্ভিকতাহীন গোছালো এক অপরূপ সংসার। ভালোবাসার পরতে পরতে সাজানো সমস্থ দেয়াল। ঘর ভর্তি এক মিষ্টি প্রেমের সৌরভ।

কিছুক্ষণ পর অন্যকোন আশীতিপর বৃদ্ধা যখন দৃঢ়পদে কাঁপাকাঁপা হাতে খাবার নিয়ে হাজির হয়। মনে হয় জগতের সমস্থ ভালোবাসার বাস এই চার দেয়ালের মাঝে।

সবুজ শ্যামলীমায় আর পারিবারিক বন্ধনের মধ্যদিয়ে ফুলে ফলে ভরে উঠা এক সম্প্রীতির বাজার এই সংসার। সে অকৃত্তিম সংসারেই চর্চা হয় বাংলার রাগ। সেটির মৃন্ময়ী সুর, তাল ও লয় মিলে জন্ম নেয় এক স্বর্গীয় সঙ্গীত। কাব্য। বাংলা ভালোবাসার গল্প।

শব্দলেখকঃ তরিকুল ইসলাম